জসীম উদ্দিন জয়নাল,পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি: বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার জন্য তীব্র তাপদাহের মধ্যেও ইউনিফর্মে সর্বদা ডিউটিতে থাকতে হয়। খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সদস্যগণ এই তীব্র তাপদাহের মধ্যে সুস্থভাবে যেন দায়িত্ব পালন করতে পারেন তার জন্য খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার মুক্তা ধর পিপিএম (বার) এর উপস্থিতিতে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মশালা অনুষ্টিত। সোমবার (২২ এপ্রিল) খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ লাইন্স ড্রিলসেডে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে সচেতনতা মূলক একটি সেমিনারের আয়োজন করেন। হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে সচেতনতামূলক দিক নির্দেশনা প্রদান করেন খাগড়াছড়ি পুলিশ হসপিটাল এর মেডিকেল অফিসার ডাঃ শিমুল কর। খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ হসপিটাল এর মেডিকেল অফিসার ডাঃ শিমুল কর হিট স্ট্রোকের লক্ষণ এর ক্ষেত্রে বলেন হিট স্ট্রোক হওয়ার আগে শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা হয় শরীর দুর্বল লাগে -গা ঝিমঝিম ভাব হয় এবং প্রচন্ড পিপাসা পায়-এর পরের ধাপে হিট দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অসংলগ্ন আচরণ, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। হিট স্ট্রোক হয়ে গেলে করণীয় সম্পর্কে ডাক্তার বলেন :-রোগীকে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে, ঘরে চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে রোগীর আশপাশে যাঁরা থাকবেন তাঁদের করণীয় হলো—- রোগীকে দ্রুত শীতল স্থানে নিয়ে যান।- তাঁর কাপড় খুলে দিন।-শরীর পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে বাতাস করুন। এভাবে তাপমাত্রা কমাতে থাকুন।- সম্ভব হলে কাঁধে, বগলে ও কুচকিতে বরফ দিন। -রোগীর জ্ঞান থাকলে তাঁকে খাবার স্যালাইন দিন।- দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।- সব সময় খেয়াল রাখবেন হিট স্ট্রোকে অজ্ঞান রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস এবং নাড়ি চলছে কি না। প্রয়োজন হলে কৃত্রিমভাবে নিশ্বাস ও নাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হতে পারে। মেডিকেল অফিসার হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে যে সকল নির্দেশনা গুলি প্রদান করেন তা হল :-যতটুকু সম্ভব ছায়ার মধ্যে ডিউটি পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে ছাতা ব্যবহার করা সর্বোত্তম। প্রচুর পরিমাণে নরমাল পানি খেতে হবে করতে হবে। যেমন: দৈনিক ২ লিটারের পরিবর্তে ৪ লিটার পানি খেতে হবে অথবা ৩ লিটারের পরিবর্তে ৬ লিটার পর্যন্ত পানি খেতে হবে। ডিউটির পরের সময়গুলোতে যথাসম্ভব ঢিলেঢালা পোশাক করতে হবে। এক্ষেত্রে সাদা পোশাক ব্যবহার করা উত্তম। খাবারের মধ্যে তরল জাতীয় খাবার,শাকসবজি বেশি খেতে হবে। ফলের মধ্যে ডাব তরমুজ ইত্যাদি। এছাড়াও পরিমিত পরিমাণে স্যালাইন খেতে হবে। ফ্রিজের ঠান্ডা পানি কোনভাবেই বেশি খাওয়া যাবেনা। নরমাল পানি খেতে হবে। বাচ্চাদেরকে কোনভাবেই রৌদ্রে বাহিরে যেতে দেওয়া যাবে না। ঠান্ডা পানিতে তোয়ালা ভিজিয়ে গা মুছতে হবে। খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার মুক্তা ধর পিপিএম (বার) বক্তব্যে বলেন, পুলিশ হচ্ছে সেবার পেশা।রোদ, ঝড় বৃষ্টিতে সব সময় আমাদেরকে আমাদের দায়িত্ব পালন করে যেতে হয়। এক্ষেত্রে কোন কিন্তু নেই। চলমান তীব্র তাপদাহের মধ্যে আমরা যাতে আমাদের অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারি তার জন্য মেডিকেল অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যেকটি নির্দেশনা আমরা সঠিকভাবে পালন করব। সেমিনারে উপস্থিত পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার সদস্যগণ যারা এই বক্তব্য শুনতেছি আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের প্রত্যেকটি ইউনিটে এবং আমাদের যারা এখানে অনুপস্থিত সকলকে মেডিকেল অফিসার কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যেকটি নির্দেশনা সঠিকভাবে পৌঁছে দেয়া যাতে তারাও এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এবং আমাদের প্রত্যেকের পরিবারকে এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে আমরা অভিভাবকরা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবো। আমরা বুঝতে পারতেছি এই সময়তে অন্যান্য বছর যদিও গরম থাকে কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যার কারণে এবারের পরিস্থিতি পুরোই ব্যতিক্রম। আমরা আমাদের আঙ্গিনায়,পরিত্যক্ত জায়গায়, আমাদের কর্ম ক্ষেত্রে সকল জায়গায় গাছ লাগাবো, ছায়াযুক্ত পরিবেশ তৈরি করব, পৃথিবীর প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মো. জসীম উদ্দিন পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রামগড় সার্কেল) মো. নাজিম উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জনাব মো. তফিকুল আলম,সহকারী পুলিশ সুপার (এসএএফ) মো. সৈয়দ মুমিদ রায়হান, সহকারী পুলিশ সুপার (মাটিরাঙ্গা সার্কেল) আবু জাফর মো. ছালেহ, এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলার প্রতিটি থানার অফিসার ইনচার্জগণ এবং জেলার অন্যান্য পুলিশ সদস্যগ।