ওয়াহিদ মুরাদ, খুলনা ব্যুরো চীফ– হিপ জয়েন্টে ক্যান্সারে আক্রান্ত ২০ বছরের তরুণ ছাত্র মেহেদী হাসানকে অর্থের অভাবে চিকিৎসা সেবা করাতে পারছেন না তার নিরুপায় পিতা মাতা। একটু সাহায্য সহানুভূতি পেলে হয়তো সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে এই তরুণ যুবক। যে তরুণের এই বয়সে পড়াশোনা নিয়ে এবং খেলাধুলা করে দিন কাটানোর কথা তখন সে দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বেডে শুয়ে বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছে। কিন্তু দারিদ্রতা তার সকল চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের দেয়াড়া গ্রামের ভ্যানচালক মোঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের পুত্র। দুই মাস যাবত ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মেহেদী সারাক্ষণ শুধু কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। সে এখন চলাফেরা করতে পারে না এমনকি সে শুয়ে ঘুমাতেও পারে না, সারাক্ষণ শুধু ব্যথা আর যন্ত্রণায় ছটফট করে তার সময় কাটে। মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ব্যথা আর যন্ত্রণায় এবং নিদ্রা বিহীন সময় কাটাতে কাটাতে দিন দিন সে মৃত্যু পথের যাত্রী হতে বসেছে। ইতিমধ্যেই তাহার হাত-পা শুকিয়ে গেছে। দুই বোন এবং এক ভাই সহ পাঁচ সদস্যের বিশাল পরিবারে তাদের অভাব অনটন সারাক্ষণ লেগেই থাকে। ভাই বোনদের মধ্যে মেহেদী হাসান সকলের ছোট। মা-বাবার বড়ই আদরের সন্তান মেহেদী। তাই তাকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করার স্বপ্ন তাদের। মেহেদী এখন দিঘলিয়া এম এ মজিদ ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণীর একজন মেধাবী ছাত্র। ছেলে লেখাপড়া শিখে চাকরি করবে নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াবে, স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে জীবন যাপন করবে এমনই আশা তার মা-বাবার। কিন্তু মা-বাবার সেই আশা এখন সম্পূর্ণ নিরাশায় পরিণত হতে বসেছে। সব মা বাবার কাছেই তাদের ছেলে বা মেয়ে রাজপুত্র বা রাজকন্যা। সে কারণেই প্রত্যেক পিতা-মাতা চান তাদের সন্তান লেখাপড়া শিখে প্রতিষ্ঠিত হবে, দেশ ও দশের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করবে। কিন্তু মেহেদী হাসান ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় তার মা বাবা এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন। এ যেন ফুল না ফোটার আগেই ঝরে যাওয়া। পাঁচ সদস্যের পরিবারে একমাত্র আয়ক্ষম ব্যক্তি মেহেদির বাবা আনোয়ার হোসেন পেশায় একজন ভ্যানচালক। সারাদিন কঠোর পরিশ্রমে ভ্যান চালিয়ে যৎসামান্য যা আয় করেন তা দিয়ে অতি কষ্টে তাদের দিন চলে। এর ভিতর দিয়েও অতি কষ্টে তাদের অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে ভালই কাটছিল দিন। কিন্তু কোথা থেকে কালবৈশাখীর মত একটি ঝড় এসে তাদের সবকিছু এলোমেলো করে দিল। সহায় সম্বল যা ছিল সেগুলি ইতিমধ্যে বিক্রি করে এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এ পর্যন্ত সন্তানের চিকিৎসা করাতে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে তার পরিবার। বর্তমানে অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার মতো কোনো ক্ষমতাই নেই মেহেদির পরিবারের। মেহেদী হাসানের বাবার ভ্যানখানাও ইতিমধ্যে বিক্রি করে দিয়েছে ছেলের চিকিৎসার জন্য। যে ঘরে তারা বসবাস করে সে ঘরখানাও বন্ধক রেখে ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু এখন আর অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার মতো কোনো ক্ষমতাই নেই মেহেদির পরিবারের। ডাক্তার মেহেদিকে দ্রুত কেমো গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। উন্নত চিকিৎসা পেলে মেহেদী পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে। সেজন্য প্রয়োজন বিশাল অংকের অর্থ। এমতাবস্থায় দরিদ্র পিতা-মাতার সেই সঙ্গতি না থাকায় নিরুপায় হয়ে পড়েছেন পরিবারটি। মেহেদির মা বাবা বলেন, আমাদের সহায় সম্বল যা ছিল তার সব খরচ করে ফেলেছি ।এখন আমাদের কাছে আর কোন অর্থ নেই, কোথায় পাবো আমরা এই বিশাল অংকের টাকা, কি করে চিকিৎসা করাবো আমাদের সন্তানের। তারা আরও বলেন, ডাক্তার বলেছেন যদি তাড়াতাড়ি উন্নত চিকিৎসা না করানো যায় তাহলে মেহেদিকে বাঁচানো কঠিন হবে। এ অবস্থায় আমরা আমাদের সন্তানের জন্য সমাজের বিত্তবান মানুষের কাছে সাহায্যের আকুতি জানাচ্ছি ।আপনাদের একটু সাহায্য সহানুভূতি পেলে আমাদের সন্তানটি এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে। মেহেদী নিজেও কান্না জড়িত কন্ঠে অশ্রুসিক্ত নয়নে এ প্রতিবেদককে জানান-“আমি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চাই, আমি বাঁচতে চাই, আমি বাঁচতে চাই।”