বন্দর প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে শুরু হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাঅষ্টমী পূণ্য স্নানোৎসব। সোমবার (১৫ এপ্রিল ) থেকে দুই দিনব্যাপী এই উৎসব শুরু হবে। এতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জানা গেছে,সোমবার বিকেল ৪ টা ২১ মিনিটে শুরু হবে উৎসবের লগ্ন শেষ হবে মঙ্গলবার ৪টা ৫৮ মিনিটে। স্নানের লগ্ন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠবে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লাখো পূণ্যার্থী। মন্ত্র পাঠ করে ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরীতকী, ডাব, আম্রপল্লব নিয়ে পূণ্যার্থীরা স্নানে অংশ নেবেন। লগ্ন শুরুর পরপরই পূণ্যার্থীর ঢল নামবে বন্দরের লাঙ্গলবন্দের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। পাপমোচনের বাসনায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পূণ্যার্থীদের পদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠবে লাঙ্গলবন্দ এলাকা।এবার ১৮টি ঘাটে পূণ্যার্থীরা স্নান করবেন বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। স্নানোৎসবকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে হাজারো পূণ্যার্থী নলিত মোহন সাধু ঘাট, অন্নপূর্ণা ঘাট, রাজঘাট, মাকরী সাধু ঘাট, গান্ধী (শ্মশান) ঘাট, ভদ্রেশ্বরী কালী ঘাট, জয়কালী মন্দির ঘাট, রাজঘাট, রক্ষাকালী মন্দির ঘাট, পাষাণ কালী মন্দির ঘাট, প্রেমতলা ঘাট, মণি ঋষিপাড়া ঘাট, ব্রহ্ম মন্দির ঘাট, দক্ষিণেশ্বরী ঘাট, পঞ্চপান্ডব ঘাট ও পরেশ মহাত্মা আশ্রম ঘাট দিয়ে পূণ্য স্নান করবেন। লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি সরোজ সাহা জানান, স্নানোৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পূণ্যার্থীরা আসছেন। আমরা আশা করছি, এবার ১০থেকে ১২ লাখ পুণ্যার্থী স্নানে অংশ নেবেন। নারীদের কাপড় বদলানোর জায়গা, বিশুদ্ধ খাওয়ার পানিসহ বিভিন্ন ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম. এ মুহাইমিন আল জিহান জানান, আমরা প্রতিবছরের মতো এবছর সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি খুব শান্তিপূর্ণ ভাবে উৎসবটি সম্পন্ন করতে পারবো।তিনি আরও জানান, সুষ্ঠুভাবে স্নান সম্পাদনের জন্য সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০ টি স্নান ঘাট সংস্কার করা হয়েছে। নদের কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ৪৭টি নলকূপ, একশ’ অস্থায়ী টয়লেটসহ স্নান ঘাটে কাপড় পাল্টানোর ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন , পূর্ণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার ও র্যাবের সহস্রাধিক সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য। তীর্থস্থানের তিন কিলোমিটার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। যানজট নিরসনে ট্রাফিক ও নদীতে নৌপুলিশ কাজ করছেন। উৎসব পালনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, স্নান উৎসবে যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা কেউ যাতে কোনো ধরনের নাশকতা করতে না পারে, সে জন্য প্রায় ১৩০০ পুলিশ সদস্য পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে, ট্রাফিক পুলিশ থাকবে। এদিকে স্নানকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস থেকে মেডিকেল টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঘাটগুলো মেরামতে কাজ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেছে জনস্বাস্থ্য বিভাগ।