পটিয়া( চট্টগ্রাম) থেকে সেলিম চৌধুরী: বঙ্গোপসাগরের মোহনা এলাকা কর্ণফুলী নদীতে রমরমা ব্যবসা চলছে চোরাই তেলের। বহিঃনোঙরে আসা বিদেশী জাহাজ, দেশীয় কার্গো ভ্যাসেল, ব্যক্তি মালিকানাধীন নৌকা, ফিশিং বোট থেকে চোরাই তেল সংগ্রহ করে কালোবাজারিরা বিক্রি করছে। বর্তমানে চোরাই তেল চোরাচালান চক্রের ২৮টি সিন্ডিকেট রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ সিন্ডিকেটগুলো কর্ণফুলী নদীতে বছরে প্রায় ৫’শত কোটি টাকার চোরাই তেলের ব্যবসা করছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, চোরাই এসব তেল বিক্রির জন্য ব্যবহার করা হয় কর্ণফুলী নদীর ঘাটগুলো। তন্মধ্যে ১৫ নং মেরিন একাডেমী ঘাট, ১৪ নং কালু মাঝির ঘাট, ১৩ নং ঘাট, ১২ নং তিন টেইগ্যার ঘাট, জুলধা ইউনিয়নের ১১ নং মাতব্বর ঘাট (বাইল্যনির বা’র হোলা), চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের বাংলাবাজার ঘাট, অভয়মিত্র ঘাট, চরপাথরঘাটা পুরোনো ব্রিজ ঘাট, চাক্তাই ঘাট, সদরঘাট ও ফিশারীঘাট অন্যতম।তথ্য মতে, দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে সরকারি দলের প্রভাবশালীরাও। এসব সিন্ডিকেট সদস্যদের বেশিরভাগের বাড়ি কর্ণফুলী পাড়ের জুলধা, বড়উঠান, চরলক্ষ্যা, চরপাথরঘাটা, খোয়াজনগর, শিকলবাহা, আনোয়ারা ও পটিয়া এলাকায়।সুএে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে দুই’শ টন (কিলোলিটার) হিসেবে বছরে ৭৩ হাজার টন চোরাই তেলের ব্যবসা হয়। অন্যদিকে এসব তেলের মূল বিক্রেতা বিদেশী জাহাজ, দেশীয় কার্গো ভ্যাসেল, ব্যক্তি মালিকানাধীন নৌকা, ফিশিং বোটের সংশ্লিষ্টরা। সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছ থেকে ফড়িয়া মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা কেনেন এসব চোরাই তেল। কর্ণফুলী নদীতে ৩০-৩৫ টি বিশেষায়িত নৌকা আছে চোরাই তেল বহনের জন্য। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ লাইসেন্স ছাড়া ও কিছু অংশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন থেকে লাইসেন্স নিয়ে চোরাই তেলের ব্যবসা চালাচ্ছেন। গত ৫ আগষ্ট নগরীর ব্রিজঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদী থেকে ৫ হাজার ২২০ লিটার চোরাই ডিজেলসহ দুটি সাম্পান (ছোট নৌকা) জব্দ করেছে নৌপুলিশ। সদরঘাট নৌ থানার এসআই মোহাম্মদ সগীর মিয়া বলেন, এ ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। ৫ দিন এস আলম সুগারমিলে উৎপাদন শুরু পুলিশ জানায়, কর্ণফুলী নদীতে দুটি সাম্পানযোগে চোরাই ডিজেল নিয়ে যাচ্ছিল একটি চক্র। খবর পেয়ে নৌপুলিশ অভিযানে গেলে টের পেয়ে সাম্পানের মাঝি এবং তেল চোরচক্রের সদস্যরা পালিয়ে যায়। পুলিশ চোরাই ডিজেল উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এরআগে ১৪ ফেব্রুয়ারি র্যাব সদস্যরা সীতাকুন্ডের সাগর পাড় এবং নগরের কোতোয়ালীর ফিশারী ঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার হাজার লিটার চোরাই ডিজেলসহ সাকিল হোসেন (২০) ও আব্দুল মালেক মানিক (৩৮) নামের দুই চোরাই তেল পাচারকারিকে গ্রেফতার করে।গত বছর ৩ জুন কর্ণফুলী থানার দক্ষিণ শাহমিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আট হাজার লিটার চোরাই তেল উদ্ধারসহ সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি চক্রের সদস্য আব্দুর শুক্কুর প্রকাশ বাল্লাকে (৪০) গ্রেফতার করে র্যাব। তিনি শাহমিরপুরের মৃত মোহাম্মদ আলীর পুত্র। আব্দুর শুক্কুরের উদ্বৃত্তি দিয়ে র্যাব জানিয়েছিলেন, সে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশ থেকে আগত জাহাজ থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ডিজেল সংগ্রহ করে বিক্রি করছিল। খরিদ্দার সেজে কথা বলতে চাইলে, চরপাথরঘাটা ব্রীজ ঘাট এলাকায় চোরাই তেলের একাধিক ব্যবসায়ী জানায়, এক সময় চোরাই তেলের রমরমা ব্যবসা ছিল। বর্তমানে কোস্টগার্ড ও পুলিশের কড়াকড়ির কারণে জাহাজ থেকে চোরাই তেল সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়ে।তারা জানান, আনোয়ারা, পটিয়া, কর্ণফুলী ও বাকলিয়া থানা এলাকার প্রায় ২৮জন চোরাই তেল কালোবাজারি বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে। তারাই মূলত সিন্ডিকেট করে চোরাই তেল সংগ্রহ, বিক্রি করে আসছে বলে বিভিন্ন সুএে জানায়।